সালাতের সুন্নাত কার্যাবলী সমূহ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ হল সালাত। এ সালাত আদায়ের যেমন ফরজ কার্যাবলী রয়েছে, তেমনি এর সুন্নাত কার্যাবলীও বিদ্যমান। নিম্নে সালাতের সুন্নাত কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সালাতের সুন্নাতসমূহঃ সালাতের সুন্নাতসমূহ নিম্নরূপ-
১। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষ উভয় কানের লতি পর্যন্ত এবং স্ত্রীলোক উভয় কাঁধ পর্যন্ত দু'হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। ওজর থাকলে পুরুষগণ কাঁধ পর্যন্ত দুই হাত উঠালেও চলবে।
যেমন-মহানবী শীতের সময়ে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে চাদরের ভেতর দিয়ে বুক বা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়।
ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন, যেহেতু হাদীসে আছে কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে। তাই কাঁধ পর্যন্ত নারী পুরুষ উভয়ের হাত উত্তোলন করা সুন্নাত। অবশ্য অন্য হাদিসের বরাত দিয়ে ইমাম আবু হানিফা ও মালেক (র) কান পর্যন্ত হাত উঠানো পুরুষের জন্য সুন্নাত বলেছেন। আর স্ত্রীলোকের জন্য কাঁধ পর্যন্ত উঠানো সুন্নাত। তবে হাতের কব্জি কাঁধ পর্যন্ত এবং আঙ্গুলের মাথা কান পর্যন্ত উঠালে উভয়ের উপর আমল করা হয়।
২। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দু হাতের আঙ্গুলগুলো খুলে রাখা এবং দুহাতের তালু ও হাতের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করা সুন্নত।
৩। তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষগণ নাভির উপর এবং নারীগণ বুকের উপরে হাত বাঁধা। আর হাত বাধার ক্ষেত্রে ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রাখতে হবে। ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরতে হবে। অন্যান্য আঙ্গুল বাম হাতের উপর স্বাভাবিক ভাবে রাখতে হবে। তবে দু'আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতের কব্জি ধরা মহিলাদের জন্য সুন্নাত।
৪। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় মাথা নত না করা সুন্নাত।
৫। ইমামের জন্য তাকবীরে তাহরীমা এবং এক রোকন হতে অন্য রোকনে যাওয়ার সময় তাকবীর জোরে বলা সুন্নত।
৬। সানা পড়া সুন্নত।
৭। আউযুবিল্লাহ পড়া সুন্নত।
৮। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়া।
৯। ফরজ সালাতের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
১০। সূরা ফাতিহা শেষে আমিন বলা। ইমাম ও মুক্তাদী উভয়ই আমীন বলবে। যেসব সালাতে ইমাম উচ্চস্বরে কেরাত পড়বে, সেক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা শেষে সকল মুক্তাদী নীরবে আমীন বলবে।
শাফেয়ি মাযহাবে উচ্চস্বরে আমিন বলা সুন্নত।
১১। সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ ও আমিন নীরবে পড়া সুন্নত।
১২। কেরাতে মাসনুন অনুযায়ী যে সালাতে যতোটুকু কোরআন তেলাওয়াত করা প্রয়োজন ততটুকু তেলাওয়াত করা সুন্নাত।
১৩। রুকু এবং সেজদার তাসবিহ যথাক্রমে
''সুবহানা রাব্বিয়াল আলা'' ও ''সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম'' পাঠ করা।
১৪। রুকুতে মাথা এবং কোমর সোজা ও স্থির রাখা এবং দু'হাতের আঙ্গুল দিয়ে উভয় হাঁটু দৃঢ়ভাবে ধরা।
১৫। রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় ইমামের ''সামিআল্লাহু লিমান হামিদা'' বলা এবং মুক্তাদির ''রাব্বানা লাকাল হামদ'' বলা।
১৬। সিজদায় যাওয়ার সময় পর্যায়ক্রমে প্রথমে হাঁটু, তারপর দু'হাত, তারপর নাক তারপর কপাল মাটিতে রাখা।
১৭। জালসা এবং কাদায় পুরুষগণ বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা এবং ডান পা এমন ভাবে খাড়া রাখা, যেন আঙ্গুলগুলোর মাথা কিবলার দিকে থাকে। আর নারীরা উভয় পা ডান দিকে বিছিয়ে তার উপর বসা। দু'হাত হাটুর উপর রাখা।
১৮। আত্তাহিয়াতু এর লা ইলাহা বলার সময় শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা সুন্নাত।
১৯। শেষ বৈঠকে তাশাহুদের সাথে দরুদ শরীফ পড়া।
২০। দরুদের পর কোন মাসনুন দোয়া পড়া সুন্নত এবং
২১। প্রথমে ডান দিকে ও পরে বাম দিকে সালাম ফিরানও সালাতে সুন্নত।
হুকুমঃ সালাতের সুন্নাত কার্যাবলী আদায় করার জন্য কোন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। তবুও সালাতকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সম্পাদন করতেন সে ভাবে আদায় করা দরকার।

No comments