স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য তথা অধিকারসমুহ কি কি তা বিস্তারিতভাবে জানুন

বিশাল কর্মক্ষেত্র এই দুনিয়া। আর এই দুনিয়ায় বসবাসের জন্য গতি, কর্মতৎপরতা ও একাগ্রতা একান্তই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মানুষ কখনো আনন্দ লাভ করে, কখনো হয় দুঃখ বেদনার সম্মুখীন। যার ফলে তার প্রয়োজন হয় সুখ-দুঃখের এক অকৃত্রিম সঙ্গী ও সাথী। যেন সে তার আনন্দে আনন্দ লাভ করে, আর তার দুঃখ এবং বিপদে হয় সমান অংশীদার। এক্ষেত্রে নারী হতে পারে পুরুষের সত্যিকারের দরদি বন্ধু ও খাঁটি জীবনসঙ্গিনী। আর পুরুষ হতে পারে নারীর প্রকৃত সহযাত্রী, একান্ত নির্ভরযোগ্য ও পরম সান্তনা বিধায়ক আশ্রয়। নিম্নে ইসলামের আলোকে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার তথা কর্তব্য সমূহ আলোচনা করা হলো।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার তথা কর্তব্য সমূহঃ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সমূহ নিম্নরুপ-
১। স্বামীর ঘর সংরক্ষণঃ স্ত্রী হলো স্বামীর ঘরের রানী। অনেক সময় স্বামী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ঘরের বাইরে কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকবেন। তাই স্বামীর অবর্তমানে ঘর গুছিয়ে রাখা, সম্পদের হেফাজত করা, সন্তানদের পরিচর্যা করা ইত্যাদি কাজগুলো সুচারুরূপে পালন করা স্ত্রীর একান্ত কর্তব্য।
২। হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় অভ্যর্থনা জানানোঃ সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষে স্বামী যখন বাহির থেকে ঘরে ফিরে আসে, তখন স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে হাসিমুখে তাকে অভ্যর্থনা জানানো। কারণ স্ত্রীর এ উদার হৃদয়ের হাসি মুহুর্তের মধ্যেই সকল ক্লান্তি, দুঃখ বেদনা ভুলিয়ে দিতে পারে।
৩। যৌন তৃপ্তি দানঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের যৌন ক্ষুধা রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে স্ত্রীরা কিছুটা অনাগ্রহী হয়ে থাকে। যৌন মিলনের ব্যাপারে সাধারণত স্বামীর পক্ষ থেকেই আমন্ত্রণ আসে। আর তাই এ ব্যাপারে স্বামীর দাবি ও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা কখনোই স্ত্রীর উচিত হতে পারে না।
৪। সতীত্ব বজায় রাখাঃ নিজের সতীত্ব বজায় রাখা স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। স্বামীর অবর্তমানে অনৈতিক কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না, যাতে স্বামী সন্দেহ করে ব,।তাই স্বামীর অনুপস্থিতিতেও স্ত্রী তার চরিত্রের হেফাজত করবে।
৫। জিদ ও হঠকারিতা পরিহার করাঃ স্বামীর বাড়াবাড়ি ও মেজাজ দেখতে পেলে স্ত্রীর খুব সতর্কতার সাথে কাজ করা ও কথা বলা উচিত। এ অবস্থায় স্ত্রী রাগ করা কিংবা নিজের সম্ভ্রম ও মর্যাদার অভিমানে হঠাৎ ফেটে পরা কোন মতেই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। স্বামীর কাছে কিছুটা ছোট হয়েও যদি পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখা যায় তবে স্ত্রীর তাই করা কর্তব্য।
৬। স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাঃ প্রতিটি স্বামীই তার সাধ্যমত চেষ্টা করে স্ত্রীর জন্য উত্তম কোন জিনিসে ব্যবস্থা করতে। তাই স্বামীর পক্ষ থেকে এ উপহার ও উপঢৌকন পেয়ে স্ত্রীর উচিত স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
৭। স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনঃ সর্বদাই প্রতিটি স্বামী তার স্ত্রীকে খুশি রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন। তাই একজন আদর্শ স্ত্রীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, স্বামীর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য চেষ্টা চালানো। কেননা এর মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।আর এর বিনিময় হিসেবে জান্নাত হবে সেই স্ত্রীর শান্তির নিবাস।
৮। স্বামীর আনুগত্য করাঃ প্রত্যেক স্বামী দিনরাত পরিশ্রম করে অনেক খাটাখাটি করে স্ত্রীকে খুশি করার জন্য। তাই স্বামীর সকল আদেশ এবং নির্দেশের আনুগত্য করা স্ত্রীর একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য।
৯। স্বামীর নেতৃত্ব মেনে নেয়াঃ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের অধিকার সমান হলেও স্ত্রীকে স্বামীর নেতৃত্বে মেনে নিতে হয়। একই আকাশে দুই সূর্য হলে পৃথিবী যেমন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনিএকই পরিবারের দুই নেতা হলে সেখানেও বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়। তাই সর্বদাই স্ত্রীর উচিত স্বামীর নেতৃত্ব মেনে নেয়া।
১০। ইবাদত পালনে পারস্পরিক সহযোগিতাঃ আল্লাহ তাআলার ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। বিশেষ করে স্ত্রী ইবাদতের প্রতি উৎসাহী হলে এর প্রভাবে স্বামী ও আগ্রহী হয়ে থাকে। তাই ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে উভয়েরই সহযোগিতা থাকাটা জরুরী।
No comments