সন্তানের প্রতি পিতা মাতার করণীও কর্তব্য তথা অধিকার সমূহ জানুন
গত লেখায় আমরা জেনেছিলাম মাতা পিতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য তথা অধিকার। আর আজকে আমরা জানবো সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য গুলো কি কি।
এই পৃথিবীতে আগমনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পিতা মাতা।আর তারাই সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব সাদরে গ্রহণ করেন। সন্তানের প্রতি পিতা মাতার অনেক কর্তব্য রয়েছে যা পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আদর্শ সমাজ গঠন সম্ভব।
সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য সমুহঃ সন্তানের প্রতি পিতা মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে অনেক। নিম্নে পৃথক পৃথক ভাবে তা উল্লেখ করা হলো।
পিতার কর্তব্যঃ
আযান ও ইকামতঃসন্তান জন্মের পর পরই পুত্রসন্তানের ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামত আর কন্যা সন্তান হলে ডান কানে ইকামত ও বাম কানে আযান শোনাতে হয়। এটা ইসলামী সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। আর এই ব্যবস্থা পিতাকেই করতে হয়।
সুন্দর নাম রাখাঃ সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী সুন্দর নাম রাখা সন্তানের প্রতি পিতার অপরিহার্য কর্তব্য গুলোর অন্যতম।তাই পিতাকে অবশ্যই এ বিসয়ে খেয়াল রাখা উচিত।
আকিকা করাঃ সন্তান জন্মগ্রহণের পর সামর্থানুযায়ী আকিকা করা সুন্নত।এ আকিকা করার কার্য সম্পাদন করা পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।\এতে পরিবার ও সন্তান উভয়ের কল্যাণ হয়।
সন্তানের প্রতিপালনঃ সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব হচ্ছে স্নেহের পরশ দিয়ে সন্তানকে যথাযথ লালন পালনের ব্যবস্থা করা, সন্তানের পোশাক-পরিচ্ছদ খাওয়া-দাওয়া ও ভরণপোষণ এর ব্যবস্থা করা ।
খাতনা করাঃ সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে যথাসময়ে খাতনা করাতে হয়। এটা হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সুন্নত।যা আমাদের শরীয়তেও সুন্নাত হিসেবে অবশিষ্ট রয়েছে ।
ইসলাম শিক্ষা দানঃ ইসলাম শান্তির ধর্ম এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এর মূল উৎস আল কুরান আল কোরআন ও হাদিসের শিক্ষায় শিক্ষিত করে সন্তানের প্রতি পিতা নৈতিক দায়িত্ব এবং এর অন্তর্ভুক্ত।
উন্নতচরিত্র শিক্ষা দানঃ চরিত্র মূল্যবান সম্পদ।পিতার সকল করণীও কাজের মধ্যে অন্যতম হলো সন্তানকে আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তোলা।
রিযিক অন্বেষনঃ সন্তানের ভরণপোষণের জন্য পিতাকেই প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে । সন্তানের ভবিষ্যতের বিষয়ে তাকে অধিক পরিমাণে চিন্তা করতে হবে।
বিবাহ প্রদানঃ পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ার সাথে সাথেই উত্তম পাত্র পাত্রীর সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করা। এতে সন্তান তার যৌন তৃপ্তি লাভের মাধ্যমে যে কোন অপরাধে মুক্ত থাকতে পারে। অন্যথায় অপরাধের দায় পিতার উপর বর্তাবে।
ইবাদতের নির্দেশ প্রদানঃ সন্তান বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার হওয়ার সাথে সাথে তাকে ফরয ও অন্যান্য ইবাদত আদায়ের নির্দেশ দেয়া পিতার অন্যতম দায়িত্ব।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদের নামাজের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর এর জন্য প্রহার কর যখন বয়স ১০ বছর হবে।
আদর্শ শিক্ষা দানঃ সন্তানকে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আদর্শগত শিক্ষায় শিক্ষাদানের দায়িত্ব পিতার। মহানবী সঃ এরশাদ করেন, পিতা মাতা সন্তান কে উত্তম আচরন শিক্ষা দেয়া অপেক্ষা আর কোন জিনিস শিক্ষা দিতে পারে না।
সন্তানের প্রতি মাতার কর্তব্যঃ
গর্ভাবস্থায়ঃ সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা একান্তই মায়ের কর্তব্য। এ সময়ে মাকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে সন্তান গর্ভে আসার পর মায়ের উচিত সর্বদা সৎচিন্তা করা, কুরআন, হাদিস ও মহামনীষীদের জীবনী অধ্যয়ন করা এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করা।
দুধ পান করানোঃ এই পৃথিবীতে মায়ের দুধের চেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য আর কিছুই হতে পারে না। সন্তানের যখন কোন খাবার গ্রহণের সাধ্য থাকে না তখন মায়ের দুধই হয় তার একমাত্র খাবার। তখনই তাকে সব কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে দুধ পান করাতে হবে।
পিতৃহীন সন্তান কে প্রতিষ্ঠা করাঃ পিতার অবর্তমানে মাকে সন্তানের সর্বাঙ্গীণ সহায়তা করতে হবে। সন্তানের ভবিষ্যৎ এর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে না করে ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে যে মা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব ভার বহন করবেন।সে মা আল্লাহর অফুরন্ত পুরস্কারে ভূষিত হবেন।
উপদেশ দেয়াঃ সন্তান ছোটকালে মোমের মত হয়ে থাকে।এ সময়ে মায়ের উচিত সন্তানকে সুন্দর সুন্দর উপদেশ দেয়া।যাতে সন্তান ভবিষ্যতে আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
চরিত্র গঠনঃ সন্তানকে আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তোলার জন্য মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মা খাওয়াতে খাওয়াতে,খেলার ছলে সন্তানকে মহামানবদের জিবনি সম্পর্কে সন্তানকে অবগত করতে পারে।
প্রাথমিক শিক্ষা দানঃ সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা মায়ের উপরই সর্বদা থাকে। যেহেতু শিশুরা মায়ের সান্নিধেই বেশিক্ষন থাকে,তাই মা -ই হলেন শিশুর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষয়িত্রী।
আমাদের পোষ্ট গুলো নিয়মিত পড়ার জন্য ধন্যবাদ

No comments