জেনে নিন রাসূল (সা) এর বক্ষ বিদারণের ঘটনা
জন্মের পর শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দু-তিন দিন মাতৃদুগ্ধ পান করেন। তারপর আবু লাহাবের সুয়াইবা নামের দাসি তাকে দুগ্ধ পান করান। তখনকার দিনে জন্মের দু সপ্তাহ পরেই মরুভূমি থেকে বেদুইন ধাত্রীরা শিশুসন্তানের অনুসন্ধানে মক্কা নগরীতে উপস্থিত হতো।
কারণ সম্ভ্রান্ত পরিবারে শিশু জন্ম নিলে তার স্তন্যদান ও লালন পালনের ভার তাদের উপর ন্যস্ত হত। এজন্য অবশ্য ধাত্রীমাতা যথাযথ পুরস্কার ও সম্মাননা পেত।
প্রথানুযায়ী ধাত্রী ব্যবসায়ী বেদুঈন রমণীরা প্রতিপাল্য শিশুসন্তানের সন্ধানে মাঝে মাঝে শহরে আসত। অবস্থাপন্ন ঘরের শিশুদের প্রতি তাঁদের অধিকতর আকর্ষণ থাকত। এজন্য ধাত্রীদের মধ্যে প্রথমত কেওই বিধবা আমেনার পুত্রকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।
অপরদিকে হালিমা নামের ধাত্রি যে বাহনে আরোহন করে মক্কায় এসেছিলেন তা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তাই অপরাপর ধাত্রিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি একসাথে মক্কা নগরীতে পৌঁছাতে পারেনি। সঙ্গত কারণেই হালিমা অবস্থাপন্ন কোন পরিবারের সন্তান পাননি।
তখন হালিমা তার স্বামীকে ডেকে বললেন, শূন্য হাতে ফিরে গিয়ে লাভ কি? এ এতিম শিশুটিকে গ্রহণ করি কি বল? স্বামী উত্তর দিলেন, নিশ্চয়ই! মুহাম্মদকেই গ্রহণ করা যাক। হয়তো তার মধ্য দিয়েই আমাদের ভাগ্য খুলে যাবে। হালিমা তখন শিশু মুহাম্মদকেই গ্রহণ করে নিলেন।
তখনকার আরবে সাদ বংশের লোকেরা বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় কথা বলার জন্য বিখ্যাত ছিল।
হালিমা ছিলেন সাদ গোত্রের মহিলা। অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে মুহাম্মদ সঃ এর লালন-পালনের ভার গিয়ে পড়ে এ বংশের হাতে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, আমি কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছি এবং সাদ গোত্রে প্রতিপালিত হয়ে তাদের বিশুদ্ধ ভাষা রপ্ত করেছি ।এজন্যই আমি তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বাগ্মী।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে হালিমা ও তার স্বামী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মুসলমান হয়েছিলেন। ইবনে আবি খুজায়মা,ইবনে জাওজি,ইবনে হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিস এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
বক্ষ বিদারণের ঘটনাঃ
রাসুল সঃ এর বয়স যখন চার বছর তখন তার জীবনে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে।
একদা শিশু মুহাম্মদ সঃ তার দুধ ভাই ও অন্যান্য বালকদের সাথে মাঠে মেষ চড়াতে গিয়েছিলেন।
এমন সময় সাদা কাপড় পরিহিত দুজন লোক আবির্ভূত হয়ে মোহাম্মদ সাঃ এর হাত ধরে একটু আড়ালে নিয়ে যায়। তাকে তারা চিৎ করে শুইয়ে তার বুক চিরে হৃদপিণ্ড বাইরে এনে একটি সোনার তশতরীতে রেখে তা জমজমের পবিত্র দ্বারা ধৌত করে।
অতঃপর তার উভয় কাঁধের মাঝে মহরে নবুয়ত স্থাপন করে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমতাবস্থায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞান হীন অবস্থায় পড়ে থাকেন। তার দুধ ভাই দূর থেকেই ব্যাপারটি লক্ষ্য করে ভয়ে দৌড়ে গিয়ে মা হালিমা কে জানায়। সে বলে যে দেখো গিয়ে মুহাম্মদ সঃ নিহত হয়েছ।
এ সংবাদ শুনে হালিমা ও তার স্বামী ছুটে এসে দেখলেন মুহাম্মদ সঃ বিবর্ণ হয়ে পড়ে আছে। তারা কিছুই বুঝতে পারলেন না। সেবা শুশ্রূষা করে উভয় মুহাম্মদকে গৃহে নিয়ে আসেন।
এ প্রসঙ্গে হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বুকে সেলাই এর চিহ্ন দেখতে পেতাম।
উপরিউক্ত ঘটনায় হালিমা ও তার স্বামী অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।তারা বলেন, এবার তো আল্লাহ যা করলেন ভালোই করলেন তারপর আবারও যদি অনুরূপ ঘটনা ঘটে তখন কি হবে শেষ পর্যন্ত তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মায়ের কোলে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যখন তাকে মক্কায় তার মায়ের নিকট নিয়ে যাওয়া হয় তখন আমিনা জিজ্ঞাসা করে। এত আগ্রহে নিয়ে যাওয়ার পর এত তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনার কারণ কি?বার বার জিজ্ঞাসা করার পর হালিমা তাকে মুল ঘটনা খুলে বলেন।
তখন আমিনা বলেন, নিশ্চয়ই আমার এ সন্তানের মাঝে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।এ কথা বলে হযরত আমিনা গর্ভাবস্থা এবং জন্মের সময়কার বিস্ময়কর ঘটনাবলী তাদের শোনান এবং নয়ন মনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে নিজের কাছে রেখে দেন।
ঐতিহাসিক ও ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, মোট চার বার রাসুল (সা) এর বক্ষ বিদারণ হয়।
১। হালিমার গৃহে অবস্থান কালে চার বছর বয়সে।
২। ১০ বছর বয়সে।
৩। হেরা পর্বতের গুহায় জিব্রাইলের সাথে কথোপকথনের সময় এবং
৪। মিরাজের রাতে।

No comments