অবশেষে জানা গেল ৩৫০০ বছর ধরে ফেরাউনের লাশ অবিকৃত থাকার কারণ
ফেরাউন, যার নাম শুনলেই আঁতকে ওঠে হৃদয়। এই ফেরাউনের লাশ অবিকৃত রাখার ব্যাখ্যা সারা জীবন বিজ্ঞান এর কাছে অজানা রহস্য হয়েই থাকবে।কেননা এর ব্যাখ্যা কোনদিনও কেউ দিতে পারবে না।
১৯৮১ সালে তৎকালীন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ মিতেরাঁ মমি করে রাখা ফেরাউনের লাশ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার জন্য তা ফ্রান্সে পাঠাতে মিসর সরকারের কাছে অনুরোধ করেন।
যখন ফেরাউনের লাশবাহি বিমান ফ্রান্সের মাটিতে অবতরণ করেন তখন দেশটির সরকার প্রধান
ও মন্ত্রিপরিষদ সহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
মনে হচ্ছিল যেন ফেরাউন এখনো জীবিত আছেন এবং তিনি ফ্রান্সের প্রকৃত শাসক। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের পর ফেরাউনের লাশ ফ্রান্সের একটি বিশেষ সংরক্ষণাগার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ বা শরীর পরীক্ষার গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের সেখানে জড়ো করা হয়। ফেরাউনের লাশ পরীক্ষা করা এবং এর অজানা রহস্য উদঘাটনে ছিল এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। ফেরাউনের লাশ সক্রান্ত প্রধান ছিলেন মরিস বুকাইলি।
ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ গবেষকদের উদ্দেশ্য হলেও নিজে ফেরাউনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে তিনি সারারাত ধরে গবেষণা চালান। কয়েক ঘন্টা গবেষণার পর ফেরাউনের লাশের কিছু লবণের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়। ফলে স্পষ্ট হয়নের, সাগরে ডুবে ফিরাউনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশ সাগর থেকে উঠিয়ে এনে মমি করা হয়।
কিন্তু বুকাইলির বিস্ময়ের মাত্রা ব্যাপক হয়ে উঠেছিল একটি প্রশ্নকে ঘিরে।
তার প্রশ্ন, এটি কিভাবে অন্য লাশগুলোর চেয়ে খুব বেশি মাত্রায় অক্ষত রয়েছে। তিনি ফেরাউনের মৃত্যুর খবর নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন এবং তাতে এটা লিখেন যে ফেরাউন সাগরে ডুবে মারা গেছে। তখন উপস্থিত সঙ্গীদের মধ্যে একজন তাকে বলল এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশে তাড়াহুড়ো না করাই ভালো। কারণ এ গবেষণার ফলাফল মুসলমানদের পক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তা নাকচ করে দেন।
কারণ তার মতে এমন ফলাফলে উপনীত হওয়া অসম্ভব। বিজ্ঞানীদের ব্যাপক উন্নতি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার উন্নত মানের সাজ-সরঞ্জাম ও উন্নত কম্পিউটার ছাড়া এটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যা তিনি মনে করতেন।
এরপর বুকাইলিকে বলা হয় যে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ এসেছে ফেরাউন ডুবে মারা গেছে, মৃত্যুর পরেও তার শরীর অক্ষত থেকে যায়। এই কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক বুকাইলি বলেন, এটা কি মোটেও যৌক্তিক?
কারণ মুহাম্মদ (সা) এর যুগে আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মাধ্যমে ফেরাউনের লাশ মমি করার কথা জানতনা।
মরিস বুকাইলি সারারাত ধরে ফেরাউনের লাশের দিকে চোখে চোখ রেখে ভাবতে লাগলেন কিভাবে কোরআন ডুবে যাওয়া ফেরাউনের লাশ উদ্ধারের কথা জানল। অথচ খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল এ ফেরাউনের লাশ উদ্ধার সম্পর্কে কিছুই বলেনি।
তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন এটা কি সেই ফেরাউন? যে হযরত মুসা আলাইহি সাল্লাম কে গ্রেফতারের জন্য তার পেছনে ছুটে ছিলেন? এখন থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগেই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওআসাল্লাম তা জানতেন এটা কি করে সম্ভব?
বুকাইলি সেই রাতেই বাইবেল ও তাওরাত পড়া শুরু করলেন।তিনি তাওরাতের একটি অধ্যায় পড়েছিলেন যে, পানি ফিরে এসে ফেরাউন ও তার পিছে পিছে আসা ঘোড়াগুলোসহ সেনাদের সবাইকে গ্রাস করে। তাদের কেউই রক্ষা পায়নি। এ অংশটুকু পড়ে বুকাইলি বিস্মিত হয়ে গেলেন। কিছুদিন পর ফরাসি সরকার কাচের কফিনে করে ফেরাউনের মমি আবারও ফেরত পাঠায়।
কিন্তু বুকাইলির মাথা তখনো ফেরাউনের সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য নিয়ে বিভোর ছিল। তিনি ফেরাউনের লাশ রক্ষা পাওয়া সংক্রান্ত কোরআনের বক্তব্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য মুসলিম দেশগুলো সফরের সিদ্ধান্ত নেন। বুকাইলি সৌদি আরবের চিকিৎসা সম্পর্কিত এক সম্মেলনে ডুবে যাওয়া ফেরাউনের লাশ রক্ষা পাওয়া সম্পর্কে গবেষণালব্ধ নতুন তথ্য উল্লেখ করেন। ওই সম্মেলনে মানব দেহ বিশ্লেষক একদল মুসলিমও উপস্থিত ছিলেন। এ অবস্থায় সেখানে একজন মুসলমান পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনুস এর ৯২ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করেন।
সেখানে বলা হয়েছে অতএব, আজকের দিনে রক্ষা করছে আমি তোমার দেহকে, যাতে তোমার পরবর্তী দের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।
বুকাইলি এই আয়াত শুনে সবার সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং সবার সামনে মুসলমান হওয়ার কথা ও পবিত্র কোরআনের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। কুরআনের সত্যতা এভাবে প্রকাশিত হতে দেখে অনেকের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল এবং হৃদয় গুলোতে পরিবর্তনের ঝড় বইতে লাগল।
তার গবেষণায় বিজ্ঞানের নতুন তথ্য গুলোর সাথে কুরআনের মিল খুঁজতে গিয়ে একটি অমিল ও কোন ভুল না থাকার ব্যাপারে তার ঈমান দৃঢ় হয়েছে। তিনি এসব গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেছেন কোরআন,বাইবেল ও বিজ্ঞান শীর্ষক বইয়ে।
১৪০০ বছর আগেও কোরআন বিজ্ঞান এর এত দিক এত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরায় তার অশেষ বিস্ময় বিধৃত হয়েছে।
ফেরাউনের গবেষণা সংক্রান্ত তথ্যের সাথে কোরানের মিল পেয়ে বুকাইলি উচ্চারণ করেছিলেন কোরআনের আয়াত। এরা কি লক্ষ্য করে না কোরআনের প্রতি। এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ হতে হতো তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য বা ভুল দেখতে পেত।
সূরা নিসা আয়াত ৮২
ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ ও ঈশ্বর হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন,যা নাস্তিকতার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তাকে শাস্তি স্বরূপ তার মরদেহ প্রদান করেছিলেন যা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে। এই অবিকৃত দেহটি যুগ যুগ ধরে একটি সতর্কবার্তা নির্দেশ করবে। স্মরণ করিয়ে দিবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে এবং এটি স্মরণ করিয়ে দিবে আল্লাহ এক ও তাঁর কোন অংশীদার নেই।
তিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই যে সৃষ্টিজগতকে লালন পালন করবে। এটা সৃষ্টিকর্তার কেরামতি। যা সমস্ত জাতি কুলের কাছে সতর্ক ও নির্দেশনা থাকবে এবং এই অবস্থার কারণ সারা জীবন অজানা থেকে যাবে।
বিজ্ঞান কোনদিনও এর উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারবে না বা এর রহস্যও খুঁজে পাবে না।

No comments